Tariff এবং Non-Tariff কাকে বলে? সংজ্ঞা, পার্থক্য, প্রকারভেদ, সুবিধা ও অসুবিধা

Tariff এবং Non-Tariff একটি দেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নীতির মূল অংশ। এই বিষয়গুলো একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই দুটি বিষয় পণ্য আমদানি ও রপ্তানি প্রক্রিয়ার ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে এবং আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতার ধরণ নির্ধারণ করে।

Tariff বা বাণিজ্য শুল্ক কাকে বলে? 

ট্যারিফ  বা বাণিজ্য শুল্ক হলো আমদানি বা রপ্তানি পণ্যের ওপর আরোপিত শুল্ক বা কর। এটি একটি নির্দিষ্ট হারে পণ্য মূল্যের ওপর আরোপিত হয় এবং একটি দেশের রাজস্ব আয়ের প্রধান উৎস হিসেবে কাজ করে।

অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে,

এটি একটি বাণিজ্য নীতি যার মাধ্যমে স্থানীয় শিল্পকে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার হাত থেকে রক্ষা করা হয়। এর মাধ্যমে যখন বিদেশি পণ্যের ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপ করা হয়, তখন স্থানীয় পণ্যগুলো তুলনামূলকভাবে সস্তা হয়ে ওঠে।

আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের দৃষ্টিকোণ থেকে,

আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের একটি নিয়ন্ত্রণমূলক উপাদান, যা পণ্যের প্রবাহকে নির্ধারণ করে। এর মাধ্যমে একটি দেশ তার বাজারে নির্দিষ্ট পণ্য বা দেশের প্রবেশাধিকার সীমিত করতে পারে।

Non-Tariff  কাকে বলে?

নন-ট্যারিফ হলো শুল্ক ছাড়া অন্য যেকোনো বিধিনিষেধ যা একটি দেশের আমদানি ও রপ্তানির ওপর প্রভাব ফেলে। এটি সাধারণত নীতিমালা, মান নিয়ন্ত্রণ এবং কোটার মাধ্যমে বাস্তবায়িত হয়।

কৌশলগত দৃষ্টিকোণ থেকে,

বাণিজ্যনীতি যার মাধ্যমে একটি দেশ অপ্রত্যক্ষ উপায়ে পণ্য আমদানিকে নিরুৎসাহিত করে। এটি পরিবেশগত নিয়ম, স্বাস্থ্য নিয়ম, বা নিরাপত্তার জন্য প্রয়োগ করা হতে পারে।

বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতার দৃষ্টিকোণ থেকে,

এটি একটি বাণিজ্যিক প্রতিবন্ধকতা, যা দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে বিদেশি পণ্য প্রবেশ সীমিত করার জন্য ব্যবহৃত হয়।

English Definition

Investopedia এর মতে,

“Tariffs are monetary barriers in the form of taxes imposed on imported or exported goods whereas Nontariff encompasses a diverse range of non-monetary measures.”

Tariff বনাম Non-Tariff

Tariff হল একটি আর্থিক বাধা (শুল্ক আরোপ), যা আমদানি পণ্যের উপর সরাসরি কর আরোপ করে।

Non-Tariff হল প্রশাসনিক বা নীতিগত বাধা যা বাণিজ্যে বাধা সৃষ্টি করে কিন্তু কর আরোপ করে না।

ট্যারিফ সরাসরি পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয় এবং এটি আমদানিকারকদের ব্যয় বাড়ায়। 

নন-ট্যারিফ পদ্ধতিতে বিভিন্ন নীতিমালা, মান নিয়ন্ত্রণ এবং সীমাবদ্ধতা আরোপিত হয়, যা আমদানির জটিলতা বাড়ায়।

Note: Non-Tariff এবং Tariff-free সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়, যেখানে Tariff-free বলতে শুল্কমুক্ত আমদানি বা রপ্তানি বুজায়।

ট্যারিফ তিন প্রকার:

  1. Specific Tariff
  2. Ad Valorem Tariff
  3. Compound Tariff

Specific

স্পেসিফিক বাণিজ্য শুল্ক হলো একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ শুল্ক, যা পণ্যের পরিমাণ যেমন ওজন, ইউনিট বা ভলিউম অনুযায়ী আরোপ করা হয়। এটি পণ্যের দামের পরিবর্তে সরাসরি তার ভৌত পরিমাণের ওপর নির্ভর করে। যেমন ১০০ কেজি চাল আমদানির জন্য প্রতি কেজিতে ৫ টাকা শুল্ক আরোপ করা এ ধরনের ট্যারিফের উদাহরণ।
স্পেসিফিক ট্যারিফের হিসাব সহজ ও মূল্য ওঠানামার প্রভাব কম।

Ad Valorem

এই ধরনের ট্যারিফ পণ্যের মূল্যের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়। এটি পণ্যের ঘোষিত মূল্যের একটি নির্দিষ্ট শতাংশ হিসেবে আরোপ করা হয়। যেমন একটি গাড়ির আমদানি মূল্যের ২০% শুল্ক আরোপ করা হল অ্যাড ভ্যালোরেম বাণিজ্য শুল্ক।

এ ধরনের ট্যারিফের মাধ্যমে পণ্যের প্রকৃত মূল্য অনুযায়ী শুল্ক নির্ধারণ করা যায় এবং দামী পণ্যের ওপর বেশি রাজস্ব আদায় করা সহজ হয়।

Compound

কম্পাউন্ড বাণিজ্য শুল্ক হলো স্পেসিফিক এবং অ্যাড ভ্যালোরেম ট্যারিফের সংমিশ্রণ। এটি পণ্যের পরিমাণ এবং দাম উভয়ের ওপর একযোগে শুল্ক আরোপ করে। যেমন একটি গাড়ির আমদানিতে ১০০ ডলার নির্দিষ্ট শুল্ক এবং পণ্যের মূল্যের ৫% অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করা।

এ ধরনের ট্যারিফের মাধ্যমে রাজস্ব আয় বাড়ানো এবং পণ্যের পরিমাণ ও মূল্য উভয়ের ওপর নিয়ন্ত্রণ রক্ষা করা সম্ভব হয়।

নন-ট্যারিফ তিন প্রকার

  1. Quota
  2. Subsidies
  3. Regulations

Quota

কোটা হলো একটি নির্দিষ্ট সীমা, যা একটি দেশের জন্য নির্ধারিত পণ্য বা নির্দিষ্ট পরিমাণ আমদানিতে আরোপ করা হয়। এটি ট্যারিফ ছাড়াও বাণিজ্য সীমাবদ্ধ করার একটি মাধ্যম। যেমন বাংলাদেশ বছরে ৫ লাখ টন চিনি আমদানির অনুমতি দেয়।

কোটা এমন একটি নন-ট্যারিফ যার মাধ্যমে স্থানীয় বাজার সুরক্ষিত থাকে এবং পণ্যের অযথা আমদানি প্রতিরোধ সম্ভব হয়।

Subsidies

সাবসিডি হলো সরকার কর্তৃক স্থানীয় শিল্প বা উৎপাদকদের আর্থিক সহায়তা প্রদানের ব্যবস্থা যা স্থানীয় পণ্যকে বিদেশি প্রতিযোগিতার সঙ্গে টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করে। বাংলাদেশ সরকার স্থানীয় কৃষকদের সারের ওপর ভর্তুকি প্রদান করে।

সাবসিডি স্থানীয় শিল্পের উন্নয়ন ও উৎপাদন ব্যয় কমাতে সহায়তা করে।

Regulations

রেগুলেশন হলো স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা এবং পরিবেশ সম্পর্কিত নিয়মকানুন, যা আমদানিকৃত পণ্যের ক্ষেত্রে অবশ্যই পূরণ করতে হয়। এটি পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যবহৃত হয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নের কিছু কৃষি পণ্যের ক্ষেত্রে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি আরোপ করা রেগুলেশনের উদাহরণ।

এর মাধ্যমে পণ্যের গুণগত মান নিশ্চিত থাকে এবং জনগণের স্বাস্থ্য এবং নিরাপত্তা রক্ষিত হয়। 

ট্যারিফের সুবিধা:

রাজস্ব আয় বৃদ্ধি

Tariff একটি দেশের জন্য রাজস্ব আয়ের বড় উৎস। যখন বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি করা হয়, তখন সরকার সেগুলোর ওপর শুল্ক আরোপ করে, যা সরাসরি সরকারের কোষাগারে জমা হয়। উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশে আমদানি করা বিলাসবহুল পণ্যের ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপ করে রাজস্ব আদায় করা হয়।

স্থানীয় শিল্প সুরক্ষা

এটির মাধ্যমে বিদেশি পণ্যের দাম বাড়িয়ে স্থানীয় শিল্পকে রক্ষা করা সম্ভব। যখন বিদেশি পণ্য বেশি দামে বিক্রি হয়, তখন দেশীয় পণ্য তুলনামূলক সস্তা হয়ে ওঠে, যা স্থানীয় শিল্পকে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে সহায়তা করে।

বাণিজ্য ঘাটতি হ্রাস

এটির মাধ্যমে আমদানির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে বাণিজ্য ঘাটতি কমানো সম্ভব। একটি দেশ যখন বেশি পরিমাণে পণ্য আমদানি করে, তখন তার বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয় কমে যায়। ট্যারিফ আরোপের ফলে আমদানি কমিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয় রক্ষা করা সম্ভব হয়।

নন-ট্যারিফের সুবিধা:

স্থানীয় মান নিয়ন্ত্রণ

নন-ট্যারিফ পদ্ধতিতে বিদেশি পণ্যের ওপর বিভিন্ন মান নিয়ন্ত্রণ বিধি আরোপ করা হয়। এটি নিশ্চিত করে যে আমদানি করা পণ্যগুলো দেশের মান এবং নিরাপত্তা মানদণ্ড মেনে চলে। উদাহরণস্বরূপ, খাদ্য এবং ওষুধ আমদানির ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য সনদ বাধ্যতামূলক।

পরিবেশগত সুরক্ষা

এই পদ্ধতিতে এমন নিয়মকানুন আরোপ করা হয় যা পরিবেশ রক্ষায় সাহায্য করে। উদাহরণস্বরূপ, কিছু দেশ পরিবেশ দূষণকারী পণ্যের আমদানি নিষিদ্ধ করে। এটি পরিবেশের উপর ক্ষতিকর প্রভাব কমাতে সহায়তা করে।

বৈদেশিক প্রতিযোগিতা কমানো

এই উপায়ে কোনো দেশ বিদেশি পণ্য আমদানিতে জটিলতা তৈরি করা হয়, যা স্থানীয় শিল্পকে বিদেশি প্রতিযোগিতা থেকে রক্ষা করে। উদাহরণস্বরূপ, ভারত তার স্থানীয় কৃষি ও শিল্পকে সুরক্ষিত রাখতে বিভিন্ন নন-ট্যারিফ বাধা ব্যবহার করে।

বাস্তব উদাহরণ

বাংলাদেশ বিদেশি গার্মেন্টস পণ্যের ওপর উচ্চ ট্যারিফ আরোপ করে, যা স্থানীয় পোশাক শিল্পকে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার হাত থেকে রক্ষা করে। এর ফলে দেশের পোশাক শিল্পের বিকাশ ত্বরান্বিত হয়েছে।

ভারত কিছু খাদ্য পণ্যের ওপর মান নিয়ন্ত্রণ (নন-ট্যারিফ পদ্ধতি) আরোপ করে, যা বিদেশি পণ্য আমদানিকে কঠোরভাবে সীমিত করে। এটি দেশের অভ্যন্তরীণ খাদ্য মান নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

যুক্তরাষ্ট্র চীনের ইলেকট্রনিক পণ্যের ওপর উচ্চ বাণিজ্য শুল্ক আরোপ করে, যার মাধ্যমে চীনা পণ্যের বাজার প্রতিযোগিতা কমিয়ে স্থানীয় শিল্পকে সুরক্ষিত করেছে।

Using the Term In Sentence:

  1. The government imposed a high tariff on luxury goods to protect domestic industries.
  2. Strict non-tariff measures were applied to ensure imported products meet safety standards.